দিরাই সংবাদদাতা
হাওর জনপদের কালনী নদীরপাড়ের চান্দপুর গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত উত্তর চান্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল অন্যরকম এক আবহ। সাদা এপ্রোন পড়া প্রাপ্তি বর্মন, সফু মিয়া, প্রাপ্ত বর্মন, শেফালীরা যেন পুরোদস্তর ডাক্তার। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেবা দিচ্ছে। বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা লাইন হয়ে দাঁড়িয়ে কেউ নিজেদের ওজন মাপাচ্ছে, কেউ উচ্চতা, কেউবা হাত ধোয়ার কৌশল রপ্ত করছে। দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার কাজটিও করছে তারা। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে অংশগ্রহণ করছে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির ১৫ জন শিক্ষার্থীর ক্ষুদে ডাক্তার টিম। বিদ্যালয়ের বারান্দায় চেয়ার টেবিল পেতে বসেছে টিমের কয়েকজন শিক্ষার্থী। টেবিলে রয়েছে ফাস্ট এইড বক্স। ক্ষুদে ডাক্তার টিমের একটি ইউনিট শিক্ষার্থীদের ওজন, উচ্চতা ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার রিপোর্টগুলো খুব সুচারো ভাবে লিপিবদ্ধ করছে তালিকায়। পুরো কার্যক্রম দেখভাল করছেন বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা ও সহকারি শিক্ষকবৃন্দ।
২০ থেকে ২৬ আগস্ট কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং সমপর্যায়ের মাদ্রাসাসহ সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষুদে ডাক্তার কর্তৃক শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে এ কার্যক্রম ফলপ্রদ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি রোগ-জীবাণু সম্পর্কে বাস্তব ধারনা ও ব্যক্তিগত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে হাতে কলমে শিক্ষা পাচ্ছে তারা। সহপাঠীরা পরস্পরে মাঝে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞানকে ছড়িয়ে দিতে পারছে।
জানা যায়, বিদ্যালয়ে কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে জোরদার করতে ২০১১ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়। কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সফলতার মুখ দেখলে পর্যায়ক্রমে ম্যালেরিয়া, জলাতঙ্ক, পুষ্টিহীনতা, ভিটামিন-এ প্লাস ক্যাম্পেইন, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সচেতনতা, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদানসহ নানাবিধ কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে এ কার্যক্রমে। বিদ্যালয়ের তৃতীয় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে বাছাই করে ক্ষুদে ডাক্তার টিম তৈরী করা হয়। তুলনামূলক বাকপটু, চটপটে শিক্ষার্থীদের বাছাই করা হয় বলছেন শিক্ষকেরা। প্রতিটি ইউনিটে ৩ জন করে ক্ষুদে ডাক্তারকে একজন শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত করা হয়।
চান্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুনা লায়লা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ক্ষুদে ডাক্তার দল গঠন এবং তাদের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা একটি অভিনব কার্যক্রম, যাতে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত হওয়ার ও দলগতভাবে কাজ করার এমনকি সুশৃঙ্খলভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে।
দিরাই পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম রায় চৌধুরী বলেন, প্রথম থেকেই ক্ষুদে ডাক্তার টিমে ব্যাপক আনন্দের সাথে বাচ্চারা অংশ্রগ্রহণ করছে। বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে নতুনত্ব যোগ করেছে। এর মাধ্যমে বাচ্চারা পরস্পরে সহযোগিতা সহমর্মিতা শিখতে পারছে।
এ প্রসঙ্গে দিরাই উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম দিরাই উপজেলার সকল বিদ্যালয়েই চলমান রয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে ক্ষুদে ডাক্তারের দল কোনো শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক বৃদ্ধিসহ দৃষ্টি শক্তিতে ত্রুটি কিংবা স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফরমে উল্লেখিত অন্যান্য বিষয়াদির তথ্য শিক্ষকের নজরে আনতে পারবে এবং বিষয়গুলো প্রাথমিক পর্যায়েই সংশোধনের ব্যাপারে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
