আজ ২১ ডিসেম্বর সাংবাদিকতা জগতের পথিকৃৎ, চেতনার বাতিঘর, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর প্রয়াত সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ এর ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী। অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ১৯২২ সালের ৬ জুলাই অবিভক্ত ভারতের বিহার রাজ্যের রাজধানী পাটনাতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস রাউজান উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের দারোগাবাড়িতে। পিতা ছিলেন আবদুল হাদি, মাতা তামান্না বেগম।
১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ সালের গণ–আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার ও মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন। ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি চট্টগ্রামে আন্দোলন বেগবান করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন। মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনায় এই সময় গঠিত ৫ সদস্যের চট্টগ্রাম সংগ্রাম কমিটির তিনি ছিলেন অন্যতম নেতা। ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতারের উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে বৈদেশিক প্রচার দপ্তরেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে ৩২ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ সংবিধান কমিটির সদস্য হিসাবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার গভর্নর নিযুক্ত হন। ২০১৯ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন।
চট্টগ্রামের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ অধ্যাপক খালেদ চট্টগ্রামের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে শত নাগরিক কমিটি গঠন করে দল মত নির্বিশেষে সকলকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসেন। তিনি দৃঢ়চেতা ও ধার্মিক ছিলেন। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার আন্দোলনে সব সময় সক্রিয় ছিলেন। তাঁর স্মরণে চট্টগ্রাম একাডেমি প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ‘অধ্যাপক খালেদ শিশু সাহিত্য পুরস্কার’ প্রদান করে থাকে। বাংলা একাডেমি তাঁর জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। প্রায় ৪৩ বছর দৈনিক আজাদীর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে ২০০৩ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।



