‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম কোনোভাবেই বাড়তে দেওয়া যাবে না’

‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম কোনোভাবেই বাড়তে দেওয়া যাবে না’

কোটি কোটি টাকার ভবন আর অর্ধশত কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম সব পড়ে আছে বছরের পর বছর। শুধু একজন ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসক ও একজন টেকনিশিয়ান না থাকায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ বছরেও শুরু হয়নি এনজিওগ্রাম ও হার্টের রিং স্থাপনের চিকিৎসা।

একজন হার্টের রোগীর পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়ার জন্য সিসিইউ, আইসিইউ, ক্যাথল্যাবসহ প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা হাসাপাতালে থাকা সত্বেও চিকিৎসকের অভাবে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরিয়তপুরসহ আশে পাশের জেলার লাখো দরিদ্র রোগী সরকারি ভাবে হার্টের উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

এদিকে ফরিদপুর মেডিকেলে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাইরে চকচক করলেও ভিতরে অনেকটা রহস্যে ঘেরা। কোটি কোটি টাকার ভবন আর অর্ধশত কোটি টাকার চিকিসার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে না বছরের পর বছর। বক্সবন্দী পরে থেকে অনেক মালামাল নষ্টও হচ্ছে। তবে এগুলো কারো যেন কোন মাথা ব্যথা নেই।

২০১৭ সালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৫ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে সে সময়ে বহু আলোচিত পর্দা কেলেঙ্কারির কালো তালিকা ভূক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আহম্মেদ এন্টারপ্রাইজ। জাতীয় বক্ষব্যাধী ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাজ্জাদ মুন্সীর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা মূল্যের ক্যাথল্যাব, ২৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা মূল্যের এমআরআই মেশিন, ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা মূল্যের ডিজিটাল এক্সরে মেশিন, রেডিও থেরাপী মেশিনসহ অর্ধশত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রোগীদের কোন কাজে আসছে না।

ফলে হার্টের সমস্যা নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা এনজিওগ্রাম বা হার্টে রিং স্থাপন করতে পারছেন না। যারা সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন তাদের বাধ্য আশে পাশে গড়ে উঠা বিভিন্ন ক্লিনিকি ও হাসপাতাল গুলোতে অধিক টাকায় সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ কেউ অর্থভাবে চিকিৎসা নিতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। ফলে বিনা চিকিৎসায় অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। অথচ সরকারিভাবে এই সেবা চালু করা গেলে স্বল্প খরচে রোগীরা সেবা নিতে পারতেন। 



ফরিদপুর শহরের মিজানুর রহমান মিজান নামের একজন হার্টের রোগী বলেন, আমার ছোট বেলা থেকে হার্টে সমস্যা। আমি যে বেতন পাই সংসার চালিয়ে চিকিৎসা করা কঠিন। তারপরও কয়েক মাস পরপর ঢাকা গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। আমি যদি ফরিদপুর শহর থেকে চিকিৎসা করাতে পারতাম সবদিক থেকে আমার জন্য সহজ হতো। তিনি বলেন, ঢাকায় গেলে একা যাওয়া যাই না। তারপর একদিন থাকতে হলে হোটেলে থাকতে হয়। হোটেলে খাওয়া সব মিলিয়ে খরচ বেড়ে যায়। সব ব্যবস্থা থাকতেও ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা নিতে না পারা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। 

সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি শিপ্রা রায় বলেন, এতো টাকার যন্ত্রপাতি থাকার পরও শুধু একজন চিকিৎসকের অভাবে ফরিদপুরসহ আশেপাশের জেলার মানুষ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। আশাকরি যথাযত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দ্রত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হার্টের রোগীর জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শূন্যপদে নিয়োগে তৎপর হবেন।

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে গত কয়েক বছর সেখানে ব্যাপক কমিশন বাণিজ্য লুটপাট হয়েছে। শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে ভবন ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনলেও তার গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যার ফলে এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে রোগীর সেবা দিতে পারছে না।

তিনি বলেন, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাও ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে যার কারণে এই হাসপাতালে রোগীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে। আমরা ফরিদপুরবাসী এর থেকে পরিত্রাণ চাই।  

হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কামালউদ্দিন আহম্মেদ বলেন,আমাদের হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে দীর্ঘদিন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, রেজিস্টার, সহকারীসহ বেশ কয়েকটি পদ শূন্য রয়েছে। একজন বিশেষজ্ঞ ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান হলেই আমরা আমাদের হাসপাতালে হার্টের এনজিওগ্রাম ও রিং স্থাপনের মতো উন্নত চিকিৎসা শুরু করতে পারি।

তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতালের পরিচাল ডা. হুমায়ূন কবিরকে একাধিক বার তার মোবাইল ফোনে কল করে পাওয়া যায়নি।

Explore More Districts